গত শনিবার হামাস যোদ্ধারা ইজরায়েলি নাগরিকদের আক্রমণ করার কয়েক ঘণ্টা পরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্যুইট করে ইজরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। ইতিহাস বলছে, ইজরায়েল-হামাস সংঘাত এবং হিংসার তীব্রতা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাত্রা ধারণ করেছে। ভারতও অনেক সময় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এবার ইজরায়েলে যে আক্রমণ করা হয়, তার তীব্রতাও কম ছিল না। বহু মানুষকে পণবন্দী করেছে জঙ্গিরা। কনসার্টে থাকা কিশোর-কিশোরী, পার্কে থাকা শিশু, বাড়িতে থাকা প্রবীণ লোকজন, এমনকি শিশুদেরকেও লক্ষ্য করে গুলি চালাতে হামাস জঙ্গিদের হাত কাঁপেনি। এই ঘটনার পর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেন মোদী। সমস্ত প্রকারের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তবে ভারতের উদ্বেগের অন্যতম বিষয় হলো ইজরায়েলে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা। বিশেষ করে গাজা ভুখণ্ডে ইজরায়েল পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর এই উদ্বেগ বেড়েছে। কাজ বা পড়াশোনার সূত্রে প্রায় ১৮,০০০ ভারতীয় রয়েছেন ইজরায়েলে। এছাড়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রায় ৮৫,০০০ নাগরিক রয়েছেন ইজরায়েলে (মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মিজোরাম, কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে)। ভারতীয়দেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইজরায়েল ইস্যুতে ভারত নিজেদের আগের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছে। সরকারের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে। হামাসের আক্রমণের নিন্দা করার পাশাপাশি বিবৃতিতে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করার সময় ইজরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার কথাও মাথায় রাখতে হবে। এর পাশাপাশি বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, প্যালেস্টাইন ইস্যুতে তারা নিজেদের “দীর্ঘদিনের এবং ধারাবাহিক” অবস্থান বজায় রাখছে।
এই বিবৃতি থেকে স্পষ্ট, ইজরায়েল ইস্যুতে ভারত ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। ১৯৯২ সালে ইজরায়েলের সাথে নয়াদিল্লির সম্পূর্ণ কূটনৈতিক সংযোগ তৈরি হয়। তারপর থেকেই ভারত এই অবস্থান গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে প্যালেস্টাইনের সমস্যাতেও ভারত সমর্থন করা চালিয়ে গিয়েছে। তবে সময়ের সাথে সাথে ইজরায়েলের সাথে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমীকরণে কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত, ঘনিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে বাণিজ্য, প্রযুক্তিগত সহায়তা, সামরিক উপাদান ক্রয় এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে যৌথ সহযোগিতা দেখা গিয়েছে। ২০১৭ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইজরায়েল সফরে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে ২০১৮ সালে ভারত সফরে এসেছিলেন নেতানিয়াহু। এর পাশাপাশি, প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্যালেস্টাইনেও গিয়েছিলেন মোদী। ২০১৭ সালে জেরুজালেমের সমগ্র অংশকেই ইজরায়েলের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করার একটি প্রচেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ভারত ভোট দিয়েছিল। নয়াদিল্লি যে কূটনৈতিক সীমারেখা বজায় রাখার চেষ্টা করছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট: সন্ত্রাসবাদকে বিনাশ করতে হবে। তবে তার মানে নির্বিচারে বোমা হামলা সমর্থনযোগ্য নয়। প্যালেস্টাইন ইস্যুতে ভারত নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। ইজরায়েলি নাগরিকদের ওপর হামাস যে বর্বরোচিত আক্রমণ চালিয়েছে, অতীতের অভিযোগ বা আপত্তির দোহাই দিয়ে তা কোনোভাবেই ন্যায্য বা যথাযথ প্রমাণ করা যায় না। অন্যদিকে একটা দায়িত্ববান রাষ্ট্রের কখনোই উগ্রপন্থী সংগঠনের মতো আচরণ করা উচিত নয়। গাজা ভুখন্ডের ওপর বোমা বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। এবার তারা দশ লক্ষাধিক মানুষকে গাজা ছেড়ে যেতে বলেছে। আগামীতে ইজরায়েল আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। গাজায় পদাতিক সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইজরায়েলের। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে এবং ইজরায়েলের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নয়াদিল্লির ভারসাম্য বজায় রাখাও কঠিন হয়ে উঠছে।
COMMents
SHARE