ভারতের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার রাজ্যগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিজোরামে নভেম্বর মাসে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানকার রাজনীতিতে নাগরিক সমাজ যতটা জোরালো ভূমিকা পালন করে, তা দেশের অন্য কোথাও দেখা যায় না। এবারের ভোটে মিজোরামে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে। অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানে অর্থ এবং পেশী শক্তির ওপর রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ততটা নির্ভরশীল নয়। উত্তরপূর্ব ভারতের এই রাজ্যে নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীর সামাজিক সেবা, ভাবমূর্তি, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের তরফ থেকে কতটা সমর্থন রয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষমতাসীন মিজো ন্যাশনাল ফন্টকে এবার চিরাচরিত প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া জোরাম পিপলস মুভমেন্টের (জেডপিএম) মোকাবিলা করতে হবে। এছাড়া শাসকদলে বিক্ষোভেরও আঁচও পাওয়া যাচ্ছে। স্পিকার লালরিনলিয়ানা সাইলো এমএনএফ ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। এমএনএফ আগে একটি উগ্রপন্থী সংগঠন ছিল। সেটিরই পোড়খাওয়া নেতা জোরামথাঙ্গা এখন মুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলাচ্ছেন। ভোটের ময়দানে এবার তিনি মিজোদের সমর্থন পেতে জনজাতির প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েছেন। প্রতিবেশী রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া কুকি-জো সম্প্রদায়ের অভাব-অভিযোগকে তিনি সমর্থন করেছেন। মিজোরামকে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দিয়েছিল যে মায়ানমার থেকে আগত উদ্বাস্তুদের বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ করতে হবে। তবে ভোট রাজনীতিতে বিরোধীদের থেকে এগিয়ে থাকার জন্য জোরামথাঙ্গা এই নির্দেশ মান্য করেননি। এর কারণ হিসাবে তিনি তাদের জন্য মিজো জনগণের জনজাতিগত সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। মিজোরামের সমস্ত রাজনৈতিক দলই সরকার এবং শাসকদলের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে। এই বিষয়ে এমএনএফের জোরালো অবস্থান দলের জন্যই অনুকূল হয়েছে। সংঘাত যখন মধ্য গগনে, তখন কুকি-জো সম্প্রদায়ের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে নাগরিক সমাজের নানা সংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছেন। এই বিষয়টি মিজো ভোটারদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
উন্নয়নের ইস্যুতে এমএনএফের রেকর্ড নিয়ে বার বার কথা বলার পাশাপাশি সবাইকে অবাক করে দিয়ে লুংলেই পুরসভা নির্বাচনে জেডপিএম ভালো ফল করেছে। এতে একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, শহরাঞ্চলে দলটি জনসমর্থনের ভিত্তি মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে। এবারের নির্বাচনে তারা সেটাকেই কাজে লাগাতে চায়। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে এমএনএফের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে কংগ্রেস। পিপলস কনফারেন্স এবং জোরাম ন্যাশনাল পার্টি সহ অনেক পার্টির জোটসঙ্গীও হয়েছে কংগ্রেস। সারা দেশের মতো এই রাজ্যেও মুদ্রাস্ফীতি একটি অন্যতম সমস্যা হয়ে উঠেছে। ভোটারদের মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। মিজোরামের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এছাড়া রাজ্যের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে পরিষেবা এবং পর্যটন সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সীমান্ত রাজ্যটি ভারতের অন্যতম ক্ষুদ্র আকারের রাজ্য - যেখানে দেশের জনসংখ্যার ০.১% বসবাস করেন। তবুও জাতীয় জিডিপিতে মিজোরাম প্রায় ০.১% অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসাবে মিজোরামকে বিবেচনা করা হয়। তবে মিজোরামকে মায়ানমার এবং পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের সাথে সংযুক্ত করার জন্য পরিকাঠামো এবং প্রকল্পের অগ্রগতি অনেকটাই সীমিত। বহুদলীয় লড়াইয়ের মাধ্যমে জনজাতিগত সহমর্মিতার পাশাপাশি উন্নয়ন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্মুখ সারিতে চলে আসবে।
COMMents
SHARE