ক্ষমতায় থাকা দল পরবর্তী নির্বাচনে হেরে যাওয়ার মতো একাধিক নজির রয়েছে রাজস্থানের ইতিহাসে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের নেতৃত্বাধীন রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার এই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেই চেষ্টা করছে। অন্যদিকে এই ট্রেন্ডের ওপর ভর করেই রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে চাইছে ভারতীয় জনতা পার্টি। সেই সাথে তারা রাজ্য নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনতে চায়। ২০০ বিধানসভা আসন বিশিষ্ট রাজস্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করার জন্য এবার এই দুই দলের মধ্যেই মূলত লড়াই হতে চলেছে। তবে দুটি দলই নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জেরবার। ২৫ নভেম্বর রাজস্থানে ভোট। গেহলট বিভিন্ন নতুন জনলক্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে কংগ্রেসর জনসমর্থন মজবুত করেছেন। এই সমস্ত পদক্ষেপের জেরে তিনি সর্বসাধারণের মধ্যে থেকে সরকার বিরোধী মনোভাব দূর করতে সক্ষম হয়েছেন এবং দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও নতুন করে আশা জাগিয়ে তুলেছেন। কংগ্রেস ডিফল্টভাবে পরাজিত হওয়ার বিপদ হয়তো এড়িয়েছে। তবে তারা কতটা সঠিকভাবে প্রার্থী বাছাই করেছে এবং কতটা কার্যকরভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে, তার ওপরই তাদের নির্বাচনী ভাগ্য নির্ভর করছে। গেহলটের সাথে তার তরুণ সহকর্মী, শীর্ষপদের দাবিদার শচীন পাইলটের যে সমস্যা ছিল, তা এখন মিটে গিয়েছে। এবারের রাজনৈতিক লড়াইয়ে গেহলটকে পূর্ণ সমর্থন করছেন পাইলট। রিপোর্টিং থেকে জানা যাচ্ছে, এবার সরকার বিরোধী হাওয়া নেই। তবে মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের বিধায়করা এবার প্রবল রাজনৈতিক ঝড়ের মুখোমুখি হতে পারেন। দলের পক্ষে এটির মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ক্ষমতায় থাকা বিধায়কদের সম সংখ্যক নতুন মুখের প্রার্থী বাছাই করার কাজে গেহলটের বহু চর্চিত রাজনৈতিক দক্ষতার পরীক্ষা হবে।
এদিকে রাজস্থানে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। তারা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসে জনসমর্থন জোগাড় করছে। প্রসঙ্গত, রাজস্থানে দলের মধ্যেই বসুন্ধরার অনেক অনুগামী রয়েছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এবার কাউকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হচ্ছে না। বসুন্ধরা ঘনিষ্ঠ অনেক নেতাকে এবারের নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার টিকিট দেওয়া হয়নি। এরকম অনেক নেতা আগামীতে দল থেকে বাদ পড়তে পারেন। বিজেপি এবার রাজস্থানে যে ৪১ জন প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে বর্তমানের সাতজন সাংসদও রয়েছেন। দলের অনেক নেতাই মুখ্যমন্ত্রী পদ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেক আবার প্রকাশ্যেই বলেছেন, দলের নেতৃত্বের সাধারণ পরিকাঠামোতে পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। তবে দল মনে করছে, এই সব নিয়ে যতই বিভ্রান্তি ছড়াক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তার কাছে এসব কিছুই নয়। বরং এটি তাদেরকে রাজনৈতিক ময়দানে সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে বসুন্ধরা রাজে নিজের রাজ্যে ও দলে তার যে রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে, সেটাকে হাতিয়ার করে নিজের মতামত প্রকাশ করার উপায় খুঁজতে পারেন। আগামী মাসে যে পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন হতে চলেছে, তার মধ্যে রাজস্থানেই বিজেপির সামনে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রাজস্থানে লোকসভা ভোটের ফলাফল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কৌশল তৈরির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে।
COMMents
SHARE