মধ্যপ্রদেশ ভৌগলিক দিক থেকে ভারতের একদম মাঝখানে অবস্থিত। আগামী নভেম্বর মাসে রাজ্যটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের ভোটের ময়দানে সেখানে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং কংগ্রেসের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হতে পারে। বর্তমানে সেখানে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। যদিও পাঁচ বছর আগে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল। তবে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের ব্যবহার করে ২০২০ সালে বিজেপি ক্ষমতা দখল করে। বিগত ১৮ বছর ধরে যে সরকার বিরোধী একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে, বিজেপি সেটির মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছে। এর জন্য তারা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়াও ভোট নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। দল স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে, এবার যদি তারা ভোটে জিততে পারে, তাহলে মুখ্যমন্ত্রী পদে শিবরাজ সিং চৌহানকে আর বেছে নেওয়া হবে না। নরেন্দ্র সিং তোমার, ফগ্গন সিং কুলাসটে এবং প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল - এই তিনজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ পার্লামেন্টের মোট সাত সদস্যকে রাজ্যের ভোটের ময়দানে নামানো হয়েছে। দল আশা করছে, দলের এক শ্রেণীর হতাশ ও ক্লান্ত কর্মীরা এতে নতুন করে উৎসাহ পাবেন। এবারের ভোটে তাই রাজ্য সরকারের পারফরম্যান্সকে সামনে রাখার বদলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত ইমেজকে কাজে লাগানোর কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। দলের রাজনৈতিক প্রচারে উপজাতি শ্রেণীর লোকজনের মতো বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর ওপর নজর দেওয়া হয়েছে। হিন্দু পরিচয় ভিত্তিক রাজনীতির একমাত্র মুখপাত্র হিসাবে বিজেপি নিজেকে দাবি করে। তারই অংশ হিসাবে নানা কাজ করা হচ্ছে। যেমন সম্প্রতি আদি শঙ্করাচার্যের ঐতিহাসিক মূর্তির সূচনা করা হয়েছে।
অন্যদিকে কংগ্রেস ঘর গোছাতে ব্যস্ত। ২০২০ সালে দলে যে বিচ্ছেদের ক্ষত দেখা দিয়েছিল, এখনও তা সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে যায়নি। এবারের নির্বাচনে তারা সেই ক্ষত ব্যবহার করেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়া নেতারা বিজেপিতে নাম লেখানোর পর, বিজেপির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়েছে। বিশেষত গোয়ালিয়র-চম্বল এলাকার কথা এখানে প্রাসঙ্গিক। এই বদলে যাওয়া রাজনৈতিক সমীকরণ থেকে কংগ্রেস ফায়দা পেতে পারে। শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা দলত্যাগ করায় কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরীণ কাজকর্মে ভারসাম্য আনতে সুবিধা পাচ্ছে। এখন দলের সব নেতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের কর্তৃত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন। তার মজবুত হাতে রয়েছে এবারের দলীয় প্রচারের দায়িত্ব। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো অভিযান থেকে রাজ্যের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। এখন দলের মধ্যে তার অনুসরণকারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে দলের পায়ের তলার মাটিকে আরও শক্ত করেছে। কংগ্রেস সাধারণত জাতপাতের ব্যাপার থেকে দূরে থাকে। তবে এবার তারা দেশজুড়ে জাতপাত ভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলেছে। সাধারণ মানুষ এই প্রস্তাবকে কী নজরে দেখছেন, মধ্যপ্রদেশে তার একপ্রকার পরীক্ষা হবে বলা যায়। রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণী থেকে কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতা রয়েছেন। তবে মধ্যপ্রদেশে তেমনটা নেই। এছাড়া রাজ্যে এবার আম আদমি পার্টিকেও ভোটের ময়দানে দেখা যাবে। তারা বিজেপি-কংগ্রেসর দ্বিমুখী লড়াইয়ের ছবিটা অপ্রত্যাশিতভাবে কিছুটা বদলে দিতেও পারে। কংগ্রেসের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো হিন্দু পরিচয় ভিত্তিক রাজনীতির প্রসঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বিজেপি যেমন বেকায়দায় পড়লে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি অবলম্বন করে, তা এড়িয়ে চলা।
COMMents
SHARE