আগামী মাসে পাঁচ রাজ্যে ভোট। ছত্তীসগঢ়, মিজোরাম, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং তেলেঙ্গানার এই বিধানসভা নির্বাচনকে অনেকেই লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল হিসাবে দেখছেন। তবে এমন সমীকরণ তৈরি করা সঠিক হবে না। কারণ এই পাঁচ রাজ্যের জনগণের সাথে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের একটা পার্থক্য আছে এবং এই নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের যে উদ্বেগ রয়েছে, তাও ভিন্ন। আসন্ন এই নির্বাচনের একটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, পাঁচটির মধ্যে তিনটি রাজ্যেই মূলত ভারতীয় জনতা পার্টি বনাম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিমুখী লড়াই হবে। এদের মধ্যে শুধুমাত্র তেলেঙ্গানা এবং মিজোরামেই উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক দল রয়েছে। উত্তর-মধ্য ভারতের বিপুল সংখ্যক হিন্দিভাষী জনগণের রাজ্যগুলোতে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি তাদের হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শে জোর দিতে দ্বিধা বোধ করছে না। কংগ্রেস ঠিক এই জায়গাতে আঘাত করে, জাতপাত ভিত্তিক জনগণনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, জনকল্যাণমূলক কার্যাবলী বাস্তবায়নে নিজেদের রেকর্ডে নজর দিয়ে বা এক গুচ্ছ অঙ্গীকারের মাধ্যমে লড়াই করতে প্রস্তুত হচ্ছে। রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট তার সরকারের নানা জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তার দলের বিধায়কদের অবস্থা তেমন নয়। দলের মধ্যে তৈরি হওয়া কোন্দল আপাতত চাপা পড়ে গেলেও রাজ্যে তাদের দলের ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান ১৮ বছর শীর্ষপদে রয়েছেন। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বৈষ্যমের সমস্যা নিয়ে রাজ্যে সরকার বিরোধী একটা হাওয়া তৈরি হয়েছে। রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শ নিয়ে হাজির হওয়া বিজেপি ভোটারদেরকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
অন্যদিকে ছত্তীসগঢ়ে মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল তার দল কংগ্রেসের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভের আগুনে জল ঢালার পর এবার জনকল্যাণমূলক রেকর্ড, কৃষি ঋণে ছাড়, খাদ্য শস্য এবং ক্ষুদ্র বনজ সম্পদের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর মতো বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে টক্কর দিতে ময়দানে নামছেন। এছাড়া তিনি ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের আঞ্চলিক পরিচয়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর। তবে এখানেও বিজেপি বিনাযুদ্ধে ময়দান ছাড়তে নারাজ। গেরুয়া শিবিরের সৌজন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। ভারত জোড়ো অভিযান পর নতুন করে জেগে ওঠা কংগ্রেস মনে করছে এই তিনটি রাজ্যে সম্পদশালী বিজেপিকে পরাজিত করার মতো সাংগঠনিক দক্ষতা তাদের দলে রয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস আদৌ কতটা কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারবে, তা এই রাজ্যগুলোর নির্বাচনের ফলাফল থেকে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তেলেঙ্গানায় কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবন বিশেষত কর্ণাটকে জয়ের পর আরও স্পষ্ট হয়েছে। রাজ্যের শাসকদল ভারত রাষ্ট্র সমিতিকে জোরদার টক্কর দিতে পারে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দল। এখানে বিজেপি তেমন একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে জোরাম পিপলস মুভমেন্টের পর মিজোরামে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গিয়েছে। প্রথাগতভাবে দুই দলীয় এই রাজ্যে এবারের ভোটে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে। তবে মণিপুরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি এবং রাজ্য সরকারের অবস্থানের প্রেক্ষিতে বলা যায়, মিজো ন্যাশনাল ফন্টের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা এবারের নির্বাচনেও শেষ হাসি হাসতে পারেন। এই নির্বাচনগুলো সেমিফাইনাল নয়। তবে দুটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের সম্মান জড়িয়ে আছে এই নির্বাচনগুলোতে।
COMMents
SHARE