লাদাখে জোর ধাক্কা খেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। লাদাখ অটোনোমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল-কার্গিলের (এলএএইচডিসি-কে) নির্বাচনে বিপুল জয় অর্জন করেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)-কংগ্রেস জোট। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সাল থেকে কার্গিল অঞ্চল সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনের আওতায় চলে যায়। বিগত চার বছর ধরে ভারতীয় জনতা পার্টি সেখানে নিজেদের শক্তি বাড়াতে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখেনি। তার পরেও যেভাবে এনসি-কংগ্রেস জোট জয় ছিনিয়ে নিল, তা এক কথায় চমকপ্রদ ব্যাপার। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম কোনো নির্বাচনে কার্গিলের ভোটাররা তাদের রাজনৈতিক মতামত জানালেন। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্গিল এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের এলাকা লে জেলা নিয়ে লাদাখ গঠিত হয়েছে। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক স্ট্যাটাস বাতিল করে এবং রাজ্যটিকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে দেয়। এই পদক্ষেপের ফলে লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা পায়। ২০২০ সালে লাদাখ অটোনোমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল-লে এর নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলোও আগেভাগে নির্বাচনের দাবি তুলেছিল। কার্গিলে এনসি পেয়েছে ১২টি আসন এবং কংগ্রেস ১০টি আসনে জয়ী হয়েছে। ২৬ সদস্যের এই কাউন্সিলে বিজেপিকে মাত্র দুটি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৭৭.৬১% ভোট পড়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ পরিযায়ী হিসাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজকর্ম করেন, অনেকে পড়াশোনাও করেন। তারা সবাই ভোট দিতে এবার ঘরে ফিরেছিলেন। অর্থাৎ এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে স্থানীয় লোকজন এবারের নির্বাচনকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। পাহাড়ি অঞ্চল কার্গিলে মোট ৭৪,০২৬ জন নথিভুক্ত ভোটার আছেন।
বিগত চার বছরে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী এবং শিয়া মুসলমান, উভয় সম্প্রদায় যৌথভাবে দাবি তুলেছে যে লাদাখের ভূমি, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থান, ভাষা এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিল অধীনে লাদাখকে বিশেষ স্ট্যাটাস দেওয়া হোক। জম্মু-কাশ্মীরকে ফের জুড়ে দেওয়া বা লাদাখকে একটি পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিও রয়েছে। কার্গিলের জনগণের মন জয়ের জন্য বিজেপি সেখানে একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন রাস্তাঘাটের উন্নতি করি, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং নিম্ন স্তরের কাজকর্ম শুধুমাত্র স্থানীয়দের জন্য সংরক্ষণ করা। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের যে কাঠামোগত পরিবর্তন করা হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে এই নির্বাচনকে গণভোট হিসাবে বিবেচনা করছে এনসি। চলতি বছরের আগস্টে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়ের জন্য মোটরবাইকে চড়ে লাদাখে ঘুরে বেড়িয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কার্গিল জেলার মাটি এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক নিশ্চয়তা এবং কার্গিলকে একটি পৃথক লোকসভা আসন করার দাবি তুলেছে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় গোষ্ঠীর যৌথ সংগঠন কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ)। রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের প্রথম নেতা হিসাবে কেডিএর এই দাবির সমর্থন করেছেন। বর্তমানে লে এবং কার্গিল মিলে একটি লোকসভা আসন রয়েছে। এবারের নির্বাচনে স্থানীয় ভোটাররা বিজেপিকে একটি বৃহত্তর বার্তা দিয়েছেন যে, লাদাখের সাথে অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই বিশেষ সুরক্ষা এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও নির্বাচিত আইনসভা ছাড়া শুধু উন্নয়নমূলক কাজ করলেই স্থানীয়দের আবেগ বোঝা সম্ভব হবে না।
COMMents
SHARE