হ্যাংঝৌ এশিয়ান গেমস ভারতের ক্রীড়া ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার কারণ এবারের এশিয়ান গেমসে ভারত শতাধিক পদক জিতে নজির সৃষ্টি করেছে। এই অভাবনীয় সাফল্যের ফলে দেশে এতটাই উন্মাদনা দেখা দিয়েছে যে দেশের মাটিতে চলতে থাকা এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপও যেন এখন পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে। হ্যাংঝৌ এশিয়ান গেমসে ভারত মোট ১০৭টি পদক জিতে নিয়েছে (২৮টি সোনা, ৩৮টি রূপা এবং ৪১টি ব্রোঞ্জ)। ২০১৮ সালে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে ভারতের ঝুলিতে ছিল ৭০টি পদক। তাই এবারের পদক জয় ঘিরে উন্মাদনা স্বাভাবিক। এবারের এশিয়ান গেমসে মূলত তিনটি ক্যাটাগরিতে ভারত অধিকাংশ সোনা জিতেছে, সেগুলো হলো ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড (ছয়টি), শুটিং (সাতটি) এবং আর্চারি (পাঁচটি)। ভারত যে বিভিন্ন ক্রীড়া ক্ষেত্রেই ধীরে ধীরে উৎকর্ষতার পরিচয় দিচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়েছে এবারের এশিয়ান গেমসে ২২টি বিভিন্ন খেলোয় শীর্ষস্থান দখলের মাধ্যমে। দুজন রোয়ার, স্কোয়াশ খেলোয়াড়, কবাডি তারকা এবং পুরুষদের হকি টিম নজর কেড়েছে। ঘোড়সওয়ারিতে প্রথমবারের জন্য ভারত স্বর্ণপদক পেয়েছে। এছাড়া রোলার স্কেটিং, উইন্ড সার্ফিং, উশু এবং সেপাকটাক্রতে নতুন নায়ক পাওয়া গিয়েছে। মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি ক্রীড়া ইভেন্ট থেকে দূরে থাকা ক্রিকেটকে অবশেষে এশিয়ান গেমসে দেখা গিয়েছে। তারাও দুটি স্বর্ণ পদক জিতে ভারতের জয়ের ঝুলিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান সময়কে ভিজ্যুয়াল যুগ বলা যায়। তাই মহিলাদের ৫০০০ মিটার জয়ের জন্য ফাইনাল ৫০ মিটারে পারুল চৌধুরীর অসাধারণ পারফরম্যান্স, পুরুষদের জ্যাভলিনে অলিম্পিক তারকা কিশোর জানার এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নীরজ চোপড়ার রূপার পদক জয়ের মতো মুহূর্তগুলো সবার স্মৃতিতেই জায়গা করে নিয়েছে।
শুনতে খারাপ লাগলেও, কিছু কন্টিনেন্টাল গেমসের পদক সব সময়ই অন্য সব ক্যাটাগরির ক্রীড়ার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। ব্যাডমিন্টন এবং টেবিল টেনিসের মতো খেলায় এশিয়াতে যে প্রতিযোগিতা দেখা যায়, তা প্রায় বিশ্বমানেরই বলা যায়। তাই এই খেলাগুলোতে পদক জিততে পারলে, তা সব সময়ই বাড়তি তৃপ্তি দেয়। পুরুষদের ডাবলস ব্যাডমিন্টনে সাত্ত্বিকসাইরাজ রাঙ্কিরেড্ডি এবং চিরাগ শেট্টির সোনা, পুরুষদের সিঙ্গলস ব্যাডমিন্টনে এইচ.এস. প্রণয়ের ব্রোঞ্জ এবং মহিলাদের ডাবলস টেবিল টেনিসে ব্রোঞ্জ জিতে নেওয়ার জন্য চাইনীজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন চেন মেঙ্গ এবং ওয়াং ইডির বিরুদ্ধে সুতীর্থ এবং ঐহিকা মুখার্জীর চোখ ধাঁধানো জয়, সবই এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে। এখানে একটা লক্ষ করার মতো বিষয় হলো, ভারত যে ২৮টি স্বর্ণ পদক জিতে নিয়েছে, তার মধ্যে ১২টি এসেছে এমন ইভেন্ট থেকে, যা অলিম্পিক রোস্টারের অংশ। এমনকি এখানেও নীরজের মোটামুটি ৮৮.৮৮ মিটার থ্রোয়ের মতো সাফল্য বিশ্ব-জয়ী হয়ে উঠেছে। এসব থেকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, ভারতীয় ক্রীড়া বহু দূর অগ্রসর হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মানের সাথে যে খামতি রয়েছে, তা পূরণ করার জন্য আরও অনেক কাজ বাকি আছে। অ্যাথলিটদের সাহায্য করার জন্য কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক, স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে অযোগ্য প্রশাসক, ফেডারেশনের মধ্যে তৈরি হওয়া অরাজকতা, আদালতে চলতে থাকা অসংখ্য লড়াই এবং ডোপিংয়ের বিপদের মতো সমস্যা এখনও চোখ রাঙাচ্ছে। মাথা উঁচু করে রাখতে হলে, শরীর এবং পা যেন নুইয়ে না পড়ে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
COMMents
SHARE