সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরবিআইয়ের মনিটারি পলিসি কমিটি (এমপিসি)। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কটি আগেই ম্যাক্রোইকনমিক স্থিতিশীলতার ওপর উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছিল। তাই অর্থনীতি বিষয়ক কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপটি থেকে স্পষ্ট, তারা বেকায়দার মধ্যে পড়ে গিয়েছে। প্রথম ত্রৈমাসিকে ততটা সমস্যা হয়নি, যখন গড়পড়তা হেডলাইন রিটেইল মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৪.৬৩%, যা আরবিআইয়ের আগাম অনুমান বলছিল, ৪.৬% হতে পারে। কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই)-এর হিসাব অনুযায়ী, শেষ ত্রৈমাসিকে দ্রব্যমূল্যের দ্রুত দাম বৃদ্ধি হয়েছে। জুলাই এবং আগস্টে যথাক্রমে ৭.৪৪% এবং ৬.৮৩% মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত ট্রেন্ডের অনুমানের ক্ষেত্রে যে ভুল হয়েছে, তা এক প্রকার স্বীকার করে নিয়ে এমপিসি গত সপ্তাহে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের জন্য মুদ্রাস্ফীতি ২০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে আগস্টের ৬.২% অনুমান বা পূর্বাভাস এখন বাড়িয়ে ৬.৪% করা হয়েছে। তবে এই অনুমানও আপাতভাবে অতি সরল। তার কারণ, আরবিআইয়ের পূর্বাভাস যে অনেকাংশে সত্যি হতে পারে, সেটা যাচাই করতে বা তার সত্যতা প্রমাণের জন্য সেপ্টেম্বর মাসে মূল অনুমান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়ে ৫%-এরও কম হওয়া উচিত ছিল। এমপিসি এখন আশা করছে যে ডোমেস্টিক এলপিজির দামে সাম্প্রতিক হ্রাস এবং সব্জির দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কমে যাওয়ায় আপাতত কিছু দিনের জন্য লোকেরা মূল্যবৃদ্ধি আঁচ ততটা অনুভব করতে পারবেন না। গর্ভনর শক্তিকান্ত দাস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, লিকুইডিটি যদি এমন পর্যায়ে বৃদ্ধি হয় যা সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক নীতির জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে, তাহলে সিস্টেম থেকে অতিরিক্ত ফান্ড সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন দেখা হেলে সিকিউরিটির ওপেন মার্কেট অপারেশন বিক্রির জন্য আরবিআই প্রস্তুত।
যে বিষয়টা স্পষ্ট হচ্ছে, তা হলো আরবিআই সোজা-সাপ্টা কথাবার্তা বলছে না। তারা সুদের হার বাড়াতে অনীহা প্রকাশ করছে। অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বার বার উল্লেখ করছে। এসবের মানে, বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা নিয়ে এখনও উদ্বেগ রয়েছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির আগাম অনুমানের ব্যাপারে এনএসওর ডেটার যথার্থতা নিয়ে হওয়া সাম্প্রতিক বিতর্ক এবং উদ্বেগ যে প্রথম ত্রৈমাসিকে ৭.৮% প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির কথা তুলে ধরার জন্য ব্যবহার করা পদ্ধতিকে অতিরিক্ত মূল্যায়নের গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই বিষয়টি বর্তমান অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি সংক্রান্ত বৃদ্ধি নিয়ে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রেক্ষিতে বিচার করতে হবে। শক্তিকান্ত দাস ভারতের পণ্য রপ্তানি এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৃষ্টিপাতের সমস্যাটি স্বীকার করে নিয়েছেন। আবহাওয়ার খামখেয়ালির জন্য তৈলবীজ এবং খাদ্যশস্য রোপণ কিছুটা কম হয়েছে। আরবিআইয়ের অনুমান বলছে, ২০২৪ অর্থবর্ষে জিডিপির ৬.৫% বৃদ্ধির পিছনে এটি অন্যতম মূল ঝুঁকি তৈরি করেছে। গত আগস্টে নীতি সংক্রান্ত বৈঠকের পর টাকা ইতোমধ্যেই ০.৭% দুর্বল হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আরবিআইয়ের কাছে আমদানির ঝুঁকিও রয়েছে। তাই তারা যদি সুদের হার বৃদ্ধি করতে না পারে, তাহলে এক্সটার্নাল সেক্টরের ঝুঁকিগুলো আরও বাড়বে।
COMMents
SHARE