এবারের অর্থ বর্ষের অর্ধেকের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পণ্য এবং পরিষেবা কর বা জিএসটি থেকে ভারতের রোজগার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৯.৯২ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে জএসটি খাতে রোজগারের তুলনায় ১১.১% বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে প্রত্যেক মাসের গড় রোজগার হয়েছে ১,৬৫,৪১৮ কোটি টাকা। এই অর্থবর্ষের ছয়বারের মধ্যে মোট চারবার জিএসটি থেকে রোজগার ১.৬ লক্ষ কোটি অতিক্রম করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে জিএসটি থেকে ১.৬৩ লক্ষ কোটি টাকা রোজগার হয়েছে, যা গড়পড়তার চেয়ে সামান্য কম হলেও আগস্ট মাসের তুলনায় ২.৩% বেশি। তিন মাসের মধ্যে আগস্ট মাসে রোজগার সবচেয়ে কম ছিল। উৎসবের মরশুম শুরু হচ্ছে। তাই আশা করা হচ্ছে, মাসিক ১.৬ লক্ষ কোটি রোজগারের ট্রেন্ড এই ত্রৈমাসিকে বজায় থাকতে পারে। জিএসটি খাতে রোজগার দেখে সরকার কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিক সময়সীমাতে জিডিপি বৃদ্ধির পরিমাণ ৭৮% থেকে হ্রাস পেয়ে ৫.৭% হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেটা যদি হয়ও, তাতে পরিস্থিতি সামলে নেওয়া যাবে। রোজগার বৃদ্ধির ইতিবাচক ছবির পাশাপাশি বেশ কিছু উদ্বেগও রয়েছে, যাতে নজর রাখতে হবে। আজ বৈঠকে বসতে চলা জিএসটি কাউন্সিল এবং নীতি নির্ধারণকারীদেরকে পরিস্থিতি বিশদে খতিয়ে দেখতে হবে।
উদ্বেগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জিএসটি ইনফ্লোয়ের বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে এই খাতে রোজগার ১০.২% কমেছে, যা ২০২১ সালের জুলাই মাসের পর সবচেয়ে স্লথ গতির বৃদ্ধি। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জুলাই এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে গড় বৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে ১০.৬% হয়েছে, যা প্রথম ত্রৈমাসিকে ১১.৫% ছিল। ডোমেস্টিক লেনদেন এবং পরিষেবার আমদানির গতি গত দুই মাসে হ্রাস পেয়ে ১৪% হয়েছে, যা জুন মাসে ১৮% ছিল। এটা উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, সেপ্টেম্বর মাসের রোজগারের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তা আগস্ট মাসে সম্পন্ন হওয়া লেনদেনের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৭-১৮ থেকে জিএসটি কাঠামো চালু হওয়ার পর ব্যবসাগুলোর বকেয়া পাওনা, যা রেমিট করার জন্য তাদের ডেডলাইন ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। এছাড়া, যে সমস্ত সংস্থার টার্নওভার ৫ কোটি টাকার বেশি, তাদের সবার ক্ষেত্রে ১ আগস্ট থেকে ই-ইনভয়েসিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই রোজগার বৃদ্ধির আরও একটা বাধ্যবাধকতা এখানে দেখা যায়। প্রকৃত কনজাম্পশন এবং প্রোডাকশান বৃদ্ধি থেকে ঠিক কতটা রোজগার হয়েছে বা তার প্রভাব কতখানি, তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। আগস্ট মাসে রেকর্ড পরিমাণ, ৯.৩৪ কোটি ই-ওয়ে বিল জেনারেট করা হয়েছে। তবে সেই তুলনায় রোজগারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেনি। তাই লেনদেনের আকার বা পরিমাণ যে হ্রাস পেয়েছে, তেমনই একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আরও একটি বিভ্রান্তিকর ট্রেন্ড হলো জিনিসপত্র আমদানি থেকে হওয়া রোজগার, যা এই বছর চতুর্থবারের মতো হ্রাস পেয়েছে। এটা ঘটনা যে জিনিসপত্রের আমদানির বিল কম রেকর্ড হওয়াটা কম জিএসটির মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে। তবে জুলাই মাসের আমদানির তুলনায় আগস্ট মাসে আমদানির পরিমাণ ১০.৭৫% বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫৮.৬ বিলিয়ন ডলার, যা নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চা। তবুও সেপ্টেম্বর মাসে যে রোজগার সংগ্রহ করা হয়েছে, তা গত মাসের তুলনায় ৫.৭% কম। এটি বাড়ছে না। আমদানি থেকে রোজগার বৃদ্ধি না হওয়ার পিছনে কী কারণ বা খামতি রয়েছে, তা কর্তৃপক্ষকে গভীরে গিয়ে উন্মোচন করতে হবে।
COMMents
SHARE