কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থিকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের শীর্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে ফের একবার রিপাবলিকান পার্টির ভঙ্গুর চেহারা, দলে ঐক্যের অভাবের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম স্পিকার হিসাবে দায়িত্ব থেকে ম্যাককার্থিকে অপসারণ করা হলো। এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার। ম্যাককার্থিকে পদ থেকে সরানোর জন্য ফ্লোরিডার কংগ্রেসম্যান ম্যাট গেইটজ অপেক্ষাকৃতভাবে বিরল ক্ষেত্রে ব্যবহার করা “খালি করে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন” ক্লজটি ব্যবহার করেছেন। বিষয়টাকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বলা যায়। ২০২৩ সালের প্রথমদিকে ম্যাককার্থি নিজেকে স্পিকার পদে নিয়ে আসার জন্য যখন জোরদার প্রচার চালাচ্ছিলেন, তখন রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসাবে এই কনসেশন ব্যবহার করেছিলেন। ম্যাককার্থি আদতে ক্যালিফোনিয়া থেকে নির্বাচিত একজন আইনসভার সদস্য। তিনি স্পিকার পদে থাকবেন কি না, তা নিয়ে সম্প্রতি ভোট হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পড়েছে ২১৬টি ভোট। অন্যদিকে স্পিকার হিসাবে তার দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ২১০টি ভোট পড়েছে। কংগ্রেসের ম্যাককার্থির রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার জন্য সমগ্র ডেমোক্র্যাটিক ককাসের সাথে হাত মেলান আট জন রিপাবলিকান। নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের সাথে সহযোগিতা করেছেন ম্যাককার্থি। তবে সেটা তার দল, মানে রিপাবলিকান পার্টির লোকজন ভালোভাবে নেননি। এক্ষেত্রে রিপাবলিকান ফ্রিডাম ককাস ও তাদের জোটের সদস্যদের কথা উল্লেখ করতে হয়। তাদের মধ্যে ম্যাককার্থির বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ঋণ সংক্রান্ত উর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ফেডারেল সরকারকে অচলাবস্থার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গ্রহণ করা প্রচেষ্টায় সহায়তা প্রদান। এই ক্ষেত্রে ম্যাককার্থি ৪৫ দিনের অস্থায়ী খরচ সংক্রান্ত বিলে স্বাক্ষর প্রদান করেছিলেন। যদিও তার এই পদক্ষেপকে ভালো নজরে দেখেননি সভার রিপাবলিকান সদস্যরা।
এই পরিস্থিতি থেকে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে যে ঐক্যের অভাব রয়েছে, তা আরও ভালোভাবে বোঝা যায়। দলের একটা বড়ো অংশ এখনও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থক হিসাবে পরিচিত। তারা সরকারের পরিধি ছোট করা এবং সরকারি খরচ কমিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। এছাড়া তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ নীতিতেও প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। যেমন, তারা রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সাহায্য হ্রাস করার দাবি তুলেছেন। “জিওপি চরমপন্থী” নামে পরিচিত এই গোষ্ঠীটি আপোস করার নীতিতে বিশ্বাস করে না, তাতে যদি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, তাতেও তারা নিজেদের অবস্থান বহাল রাখার পক্ষপাতী, যেমন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া। ম্যাককার্থি তার দলের এই গোষ্ঠীটির মন জয় করার চেষ্টা যে করেননি, তা নয়। তিনি তাদের কথা মাথায় রেখেই ইউক্রেনের সমর্থনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ৬ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পরিকল্পনা খারিজ করে দেন। শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট পুত্র হান্টার বাইডেনের বেআইনি কাজের অভিযোগকে হাতিয়ার করে প্রেসিডেন্টকে ইম্পিচ করার পরিকল্পনার কথাও তিনি ঘোষণা করেন। তিনি যদিও শেষ তা করতে পারেননি। তবে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে থাকা এই গোষ্ঠীটির জন্য ২০২৪ সালে, নির্বাচনের বছর দলটিকে চড়া রাজনৈতিক মূল্য চোকাতে হতে পারে। স্বতন্ত্র ভোটারদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যারা স্যুইং ভোটের একটা বড় অংশ। তারা রিপাবলিকান পার্টি থেকে নিজেদের দূরত্ব বজার রাখতে পারেন, তার কারণ দলটি নিজেদের কোন্দল মেটাতে পারছে না এবং একজোট হতে পারছে না।
COMMents
SHARE