বিহারে জাতপাত ভিত্তিক একটি সমীক্ষা হয়েছে। জাতপাত অনুযায়ী রাজ্যের জনসংখ্যার একটা হিসাবও প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সেন্সাস বা জনগণনার সমস্ত মানদণ্ড এই সমীক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে। দুই স্তরীয় প্রক্রিয়ায় প্রথমে পরিবারের তালিকাভুক্তি করা হয়, তারপর প্রতিটি পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই জনসংখ্যার রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, বিহারের ১৩ কোটি মানুষের ৬৩% অতি পিছিয়ে থাকা শ্রেণী বা এক্সট্রিমলি ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস (ইবিসি) এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর (ওবিসি) অন্তর্ভুক্ত। লোকজনের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিশদ বিবরণ নথিভুক্ত করা হয়েছে। তবে সেটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। দেশজুড়ে এরকম জাতপাত ভিত্তিক জনগণনার জন্য রাজনৈতিকভাবে দাবি উঠেছে বহু আগেই। শিক্ষা এবং সরকারি পরিষেবায় মোট সংরক্ষণে ৫০% আইনি সীমা পুনরায় বিবেচনা করার জন্য বিচারবিভাগীয় স্তরেও দাবি তোলা হয়েছে। বিহারের পদক্ষেপ পর এই দুটি দাবি আরও জোরালো হবে। দলীয় রাজনীতির সমীকরণও বদলে যেতে পারে। সব শ্রেণীর হিন্দুদের নিয়ে বিজেপি একটি বিশাল সমর্থনের ভিত তৈরি করতে চায়। অন্যদিকে কিছু রাজনৈতিক দল সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জনগণের সমর্থনকে হাতিয়ার করেছে। বিহারে জাতপাত ভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশের পর এই দুই ধরনের রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের যে উপায় রয়েছে, তার মধ্যে লড়াইয়ের নতুন একটি অধ্যায় খুলে যেতে পারে। বর্তমান সময়ে আমরা দেখছি, হিন্দুত্ববাদের হাতিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ কাজে লাগছে না। এই দলগুলো সাধারণত ওবিসিদের সমর্থনের ওপরই ভরসা করে। তবে এবার প্রভাবশালী বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য রাজনৈতিক শ্রেণীকে ব্যবহার করতে পারে। বিভিন্ন রাজ্যে সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়ার জন্য যে দাবি তোলা হয়েছে, তা যে যথাযথ, তা প্রমাণ করার জন্য বিচার বিভাগের তরফ থেকে এক প্রকারের ‘পরিমাপযোগ্য ডেটা’ চাওয়া হচ্ছিল। বিহারের জনসংখ্যার রিপোর্ট সেই কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়া, জাতপাত ভিত্তিক জনগণনা কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, বিহার থেকে তা জানা গেল। এই কাজে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাজ্যের জাতিগত তালিকায় থাকা ২১৪টি জাতির সবাইকে একটি করে কোড প্রদান করা। সাব-কাস্ট এবং সেক্টগুলো আগেভাগে শনাক্ত করা হয় এবং তা জাতিগত বৃহত্তর নামের আওতায় আনা হয়। এর মানে গণনাকারীরা যে কোনো নামের জাতিকেই একটি কোড অ্যাসাইন করতে পারতেন, যা উত্তরদাতারা জানিয়েছেন। ২০১১ সালে পরিচালনা করা জাতীয় স্তরের জনগণনার জাতপাত ভিত্তিক ‘আর্থ-সামাজিক এবং জাতিগত সেন্সাস’-এর বিশদ বিবরণ কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশ করেনি। এর কারণ হিসাবে তাদের তরফ থেকে দাবি করা হয়, এটি থেকে যে ডেটা পাওয়া গিয়েছে, তা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর এবং এলোমেলো। লোকজন প্রায় ৪৬ লক্ষ জাতপাতের কথা জানিয়েছেন। এর কারণ তাদেরকে যখন তাদের জাতপাতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তারা কাস্ট, সাব-কাস্ট, সেক্ট, ক্ল্যান এবং পদবীর কথা জানিয়েছেন। জাতপাত ভিত্তিক জনসংখ্যা কত, তা সঠিকভাবে জানতে পারলে তা উপযোগী হতে পারে এবং বাস্তবে এটি থেকে নানা সুবিধাও পাওয়া যেতে পারে। তবে আমাদেরকে সংবিধান অনুযায়ী বৃহত্তর লক্ষ্যটি মাথায় রাখতে হবে এবং সেটা হলো জাতপাতহীন সমাজ গড়ে তোলা। ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা অবশ্যই সমাজে থাকা নানা বৈষম্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে, লোকজনের জাতপাত শনাক্ত না করেই যেন সমানভাবে সম্পদ বন্টন করা যায়।
COMMents
SHARE