কোয়ান্টাম ফিজিক্সের নিয়ম বলছে, ফল বা পাথরের মতো বস্তুতে থাকা ইলেক্ট্রনের পর্যবেক্ষণযোগ্য প্রপার্টিজ কয়েকশ অটোসেকেন্ডের মধ্যে বদলে যায়। এক অটোসেকেন্ড মানে ১০-১৮ সেকেন্ড। অতি দ্রুত গতিতে হওয়া এই পরিবর্তনগুলোর ব্যাপারে গবেষণা করার জন্য বিশেষ ধরনের টুলের প্রয়োজন এবং এই সমস্ত টুল তৈরির জন্যই ২০২৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অ্যানে এলহুইলার, পিয়ের অগস্টিনি এবং ফেরেঙ্ক ক্রাউৎজ। ১৯৮০-র দশকের শেষদিক থেকে ড. এলহুইলার একাধিক পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে একটি নোবল বা নতুন গ্যাসের নির্দিষ্ট পরিমাণের ওপর ইনফ্রারেড আলোকরশ্মি ফেললে তা থেকে একাধিক ওভারটোন তৈরি হয়: যে সমস্ত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অরিজিনাল আলোর তরঙ্গের একটি ইন্টেগার-ফ্র্যাকশন হিসাবে উপস্থিত ছিল। এছাড়া তার টিম অরিজিনাল তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি এবং ওভারটোনের তীব্রতার মধ্যে থাকা অদ্ভুত সম্পর্কের কথা জানতে পারেন এবং এটির ব্যাখ্যা করার জন্য কোয়ান্টাম ফিজিক্সের বর্তমানের আইনটি ব্যবহার করেছেন - যা হলো একটি মাইলস্টোন। যদি ওভারটোনের তরঙ্গ চূড়া সারিবদ্ধ হয়, তাহলে সেগুলো আরও তীব্র সারির সংমিশ্রণ প্রস্তুত করে (কনস্ট্রাকটিভ ইন্টারফেয়ারেন্স); একটি তরঙ্গের চূড়া যখন অন্যটির কুণ্ডের মুখোমুখি হয়, তখন সেগুলো নিজেদের বিনাশ ঘটায় (ডেস্ট্রাকটিভ ইন্টারফেয়ারেন্স)। পদার্থবিদরা উপলব্ধি করেছে যে এই শক্তিবৃদ্ধির প্রভাবটি এমন সময়ে পেশ করা যেতে পারে যে কয়েক অটোসেকেন্ডের পালস সহ নির্গমণ করা গ্যাস থেকে তীব্র চূড়া তৈরি হয়, যেখানে ডেস্ট্রাকটিভ ইন্টারফেয়ারেন্স তার কাট-অফ অর্জনে সক্ষম হয়ে ওঠে। ড. অগস্টিনি এবং তার দলবল ২০০১ সালে ২৫০ অটোসেকেন্ডের একটি পালস সহ আলো উৎপাদনের মাধ্যমে এটি হাতেকলমে করে দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই বছরই ড. ক্রাউৎজ এবং তার সঙ্গীরা ৬৫০ অটোসেকেন্ডের একটি পালস আইসোলেট করেছিলেন এবং একগুচ্ছ ফোটনের দ্বারা ক্রিপ্টন অ্যাটম থেকে নির্গত ইলেক্ট্রনের কাইনেটিক এনার্জি পরিমাপ করতে এটি ব্যবহার করেন। অবশেষে অটোসেকেন্ড ফিজিক্স বাস্তবে হাজির হয়।
মেডিসিনে নোবেল প্রাইজে এই বছর mRNA ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন এবং কোভিড-১৯ মহামারির মোকাবিলায় তার কার্যকারিতা উদাযপন করা হয়েছে। এখানে মানবজাতির ফায়দা স্পষ্ট, তবে অটোসেকেন্ড ফিজিক্সের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। তবে, প্রমাণ দেখাতে না পারলে, প্রমাণ যে নেই, তা ধরে নেওয়া যায় না। বায়োকেমেস্ট্রি, ডায়াগনস্টিক্স, সুপারকন্ডাক্টিভিটি এবং ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনিক সহ সম্ভাব্য ইমিডিয়েট ভ্যালুর সেটিংসের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনের নির্দিষ্ট ডায়ানামিক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কয়েক অটোসেকেন্ডের মধ্যে উদ্ভব ও বিনাশ হয়ে যাওয়া একটি অজানা কার্যপ্রক্রিয়ার ওপর নোবেল জয়ী বিজ্ঞানীদের সৌজন্যেই আলোকপাত করা সম্ভব হয়েছে। তবে আবারও বলতে হয়, কোনো উদ্ভাবন বা আবিষ্কার পরে মানুষের কাজে কতটা উপযোগী হয়ে উঠবে, তা বিচার করার জন্য আমাদের কাছে প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ তথ্য থাকে না। ২০১৬ সালে রসায়নে নোবেল জয়ীদের সম্মাননা দেওয়ার কারণ তারা স্বতন্ত্র মলিকিউল দিয়ে মোটর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন - সেই সাফল্য বাস্তবে কোন কাজে লাগানো যেতে পারে, তখন তা জানা ছিল না। তবে এটি আবিষ্কার করার জন্য তারা যে সমস্ত পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, সেগুলো রসায়নের অন্যান্য ক্ষেত্রের উন্নতিতে সাহায্য করেছিল। তাদের মধ্যে এক নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী জে. ফ্রেজার স্টোডার্ডের কথা অনুযায়ী বলতে হয়, আগে যে কাজ কঠিন ছিল, আজ যদি তা সহজে করা যায়, তাহলে সেই পরিবর্তনের মধ্যে একটি গুরুত্ব রয়েছে এবং সেটির উপযোগীতা কী, তা খুঁজে পেতে এখনও আমাদের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে।
COMMents
SHARE