ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেল প্রাইজের জন্য যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই নিজেদের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। তবে জয়ী হিসাবে শেষ পর্যন্ত যার নাম বেছে নেওয়া হবে, তার টাইমিং এবং প্রসঙ্গ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ক্যাটালিন কারিকো এবং ড্রু ওয়েইসম্যানের বাছাই আপাতভাবে সঠিক বলেই মনে হতে পারে। তাদের কাজের দৌলতেই কোভিড-১৯ ভাইরাসের মোকাবিলায় কার্যকর mRNA প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সালে নোবেলের যে ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বিশেষ অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার কারণ মনোনীত বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের ফলেই লোকজন এখন নিরাপদে এবং হাসপাতালের বাইরে রয়েছেন। এটি একটি যথাযথ পদক্ষেপও বটে। মেডিসিনের জন্য নোবেল প্রাইজ অবশ্যই এমন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রদান করা উচিত, যেটি মানবজাতির কল্যাণে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। mRNA নিঃসন্দেহে এইকাজ করতে সক্ষম হয়েছে। এর পাশাপাশি নোবেল আরও একটা কারণেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যে এটি বিজ্ঞানে মহিলা বিজ্ঞানীর অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করছে। এখনও পর্যন্ত ১৩ জন মহিলা বিজ্ঞানী মেডিসিনে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন (মোট ২২৫ জন পুরস্কার প্রাপকের মধ্যে)। এছাড়া এখনও পর্যন্ত মাত্র ৬২ জন মহিলা নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন (৮৯৪ জন পুরুষ এই পুরস্কার পেয়েছেন)।
বাধার মুখে পড়েও বা প্রতিকূল পরিস্থিতি সম্মুখীন হয়েও পরিচালনা করা শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং ইন্টারসেক্টোরাল সহযোগিতা থেকেই অনিবার্যভাবে সেরা ফলাফল পাওয়া যায়। mRNA যখন সামান্য সম্ভাবনার একটি বিষয় হয়ে ওঠে, তখন থেকেই এটির ব্যাপারে হাঙ্গেরিয়ান বায়োকেমিস্ট ক্যাটালিন কারিকো প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। মানবদেহে থাকা কোষে ডিএনএর মধ্যে এনকোড করা জিন সংক্রান্ত তথ্য মেসেঞ্জার আরএনএতে (mRNA) ট্রান্সফার করা হয় এবং তারপর প্রোটিন উৎপাদনের জন্য একটি টেমপ্লেট হিসাবে এটি ব্যবহার করা হয়। প্রোটিন হলো কোষের মূল উপাদান এবং এটি বৃদ্ধি ও মেরামতির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৮০-র দশকে ভ্যাকসিন এবং থেরাপিতে প্রয়োগের জন্য mRNA ব্যবহার করতে ভিট্রো ট্রান্সক্রিপশন নামে একটি পদ্ধতি অনুমোদন পেয়েছিল। তবে ডেলিভারি এবং প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়ার মতো চ্যালেঞ্জ সহ নানা বাধার সম্মুখীন হওয়ায় এটি নিয়ে কাজ অগ্রসর হয়নি। তবে তাতে দমে যাননি কারিকো। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসারের সাথে আলাপ হওয়ার পর থেকে তিনি থেরাপির জন্য mRNA ব্যবহার করার উপায় গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। ইমিউন সারভেইলেন্স এবং ভ্যাকসিন-প্রভাবিত ইমিউন রেসপন্সের অ্যাক্টিভেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ডেনড্রাইটিক কোষ নিয়ে গবেষণা চালানো ইমিউনোলজিস্ট ওয়েইসম্যান তার সাথে যোগদান করেন। বিগত কয়েক বছর ধরে তারা mRNA-তে বেস মডিফিকেশন করে ডেলিভারি পাথকে আরও সহজ করেন এবং প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে মুক্তির উপায় সন্ধান করতেও সক্ষম হন। একটা অস্পষ্ট ধারণা ক্রমশ বাস্তবের দুনিয়ায় ডানা মেলে ওঠে। এটা ২০০৫ সালের ঘটনা, কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার ১৫ বছর আগের কথা। তবে উপযুক্ত সময় এবং প্রাসঙ্গিকতা হাজির হয় ২০১৯ সালে, যখন কোভিড-১৯ ভাইরাসের সার্ফেসে থাকা এস প্রোটিন তৈরি করার জন্য মানব দেহের কোষকে নির্দেশ দিতে mRNA ভ্যাকসিনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যদি কেউ সংক্রমণে আক্রান্ত হন, তাহলে এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। এই উপায়ের কার্যকারিতা নিঃসন্দেহে আলোড়ন তৈরি করেছে।
COMMents
SHARE